• রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

ভোটের আগে বড় পদোন্নতি

  • অনলাইন ডেস্ক
  • প্রকাশিত ০৮ নভেম্বর ২০২৩

রেজাউল করিম হীরা ও কবির হোসেন:

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার ঠিক আগ মুহূর্তে পুলিশ প্রশাসনের দুই স্তরের পদোন্নতি দিয়েছে সরকার। এরমধ্যে অতিরিক্ত উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত ডিআইজি) পদে ১৫২ জন এবং পুলিশ সুপার হিসেবে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার ১৭৭ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। গতকাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে এই ৩২৯ কর্মকর্তার পদোন্নতির আলাদা আলাদা প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, নির্বাচনের আগে প্রশাসন ও পুলিশকে 'খুশি করার জন্য' এসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এর ফলে নির্বাচনের মাঠে সমান প্রতিযোগিতার পরিবেশে নষ্ট হবে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, পুলিশের পদোন্নতি একটি রুটিনমাফিক প্রক্রিয়া। অনেক পুলিশ কর্মকর্তা উপযুক্ত হওয়ার পরেও দীর্ঘদিন ধরে পদোন্নতি পাচ্ছিলেন না। তাদের জন্যই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় বিশেষ এই পদোন্নতির ব্যবস্থা করেছে। এর সঙ্গে নির্বাচনের কোনো যোগসূত্র নেই। এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে জারি একটি প্রজ্ঞাপনে ১২ পুলিশ সুপারকে (এসপি) অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি দেওয়ার কথা জানানো হয়। অন্য প্রজ্ঞাপনে ১৪০ জনকে সুপার নিউমারির অতিরিক্ত ডিআইজি পদে (গ্রেড-৪) পদোন্নতি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের পুলিশ-১ শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব মো. মাহবুর রহমানের সই করা পৃথক দুটি প্রজ্ঞাপনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার ১৭৭ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দিয়ে পুলিশ সুপার (গ্রেড-৫) করা হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার আব্দুল ওয়ারীশ, টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার, ডিএমপির উপকমিশনার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন, কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এ এইচ এম আবদুর রকিব, ডিএমপির উপকমিশনার মোহাম্মদ আনিসুর রহমান, এ বি এম মাসুদ হোসেন, মো. শহিদুল্লাহ, খুলনা নৌ-পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শরিফুর রহমান, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান, বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, যশোরের পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার ও ডিএমপির উপকমিশনার আসমা সিদ্দিকা মিলিকে অতিরিক্ত ডিআইজি করার বিষয়টি জানানো হয়। অন্য প্রজ্ঞাপনে ১৪০ জনকে সুপার নিউমারির অতিরিক্ত ডিআইজি পদে (গ্রেড-৪) পদোন্নতি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। সুপার নিউমারারি পদ বলতে বোঝায় পদগুলোতে কর্মরত পদধারীদের পদোন্নতি, অবসর, অপসারণ বা অন্য কোন কারণে পদ শূন্য হলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিলুপ্ত হবে। পদোন্নতির প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে, গত ৭ সেপ্টেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং ২৫ অক্টোবর অর্থ বিভাগের ব্যয় ব্যবস্থাপনা-৫ শাখার চিঠির উল্লেখিত সব আনুষ্ঠানিকতা পালন শেষে সৃষ্ট ১৪০টি সুপারনিউমারারি পদের বিপরীতে এ পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। মিশন, শিক্ষা ছুটি বা প্রেষণ ও লিয়েলে কর্মরত কর্মকর্তারা মূল কর্মস্থলে যোগদানের পর তাদের পদোন্নতি কার্যকর হবে। প্রকৃত যোগদানের তারিখের আগে কোনো আর্থিক সুবিধা তারা পাবেন না। পদ সৃজনের তারিখ থেকে ১৪০টি সুপার নিউমারারি পদের মেয়াদ হবে এক বছর। দায়িত্ব পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা সপদে বহাল থেকে দায়িত্ব পালন করবেন বলেও প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে। অন্যদিকে অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি পাওয়া বাকি ১২ জন কর্মকর্তার বিষয়ে বলা হয়েছে, তাদের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিবের বরাবর যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পদোন্নতিপ্রাপ্ত পদে যোগদানপত্র পাঠাতে হবে। চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ে নির্বাচন কমিশনের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার কথা রয়েছে। আগামী জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হতে পারে ভোটগ্রহণ।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের পুলিশ-১ শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব মো. মাহবুর রহমান সই করা পৃথক দুটি প্রজ্ঞাপনে ১৭৭ কর্মকর্তার পদোন্নতির বিষয়ে জানানো হয়। পদোন্নতির প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, গত ৭ সেপ্টেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং ২৫ অক্টোবর অর্থ বিভাগের ব্যয় ব্যবস্থাপনা-৫ শাখার চিঠির উল্লিখিত সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে সৃষ্ট ২৫০টি সুপারনিউমারারি পদের বিপরীতে এ পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। মিশন, শিক্ষা ছুটি বা প্রেষণ ও লিয়েনে কর্মরত কর্মকর্তারা মূল কর্মস্থলে যোগদানের পর তাদের পদোন্নতি কার্যকর হবে। প্রকৃত যোগদানের তারিখের আগের কোনো আর্থিক সুবিধা তারা পাবেন না। পদ সৃজনের তারিখ থেকে ১৫০টি সুপারনিউমারারি পদের মেয়াদ হবে এক বছর। দায়িত্ব পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা সপদে বহাল থেকে দায়িত্ব পালন করবেন। অন্যদিকে পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি পাওয়া বাকি ২৭ জন কর্মকর্তার বিষয়ে বলা হয়েছে, তাদের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিবের বরাবর যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পদোন্নতিপ্রাপ্ত পদে যোগদানপত্র পাঠাতে হবে।

নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, আগামী সপ্তাহে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা এবং জানুয়ারিতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কথা রয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নির্বাচনের আগে আগে প্রশাসন ও পুলিশকে খুশি রাখতেই এ ধরণের পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। জনগণের অর্থেই রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের কাজ করছে বলে মনে করেন অনেক পর্যবেক্ষক।

নির্বাচন পর্যবেক্ষক শারমিন মুরশিদ বলেন, নির্বাচনের এই আগ মুহূর্তে সরকারের এরইমধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মতো আচরণ করাটা উচিত ছিল। এসব 'বিশেষ সুবিধা' দেওয়াটা এখন ঠিক হয় নি। এটা নির্বাচনকে, নির্বাচনের প্রস্তুতিকে প্রভাবিত করবে এবং এক ধরণের নেতিবাচক বার্তা দিবে।

তিনি প্রশ্ন তোলেন, সরকারকে এই মুহূর্তেই কেন এ ধরণের পদক্ষেপ নিতে হলো? তিনি মনে করেন, এমন পদক্ষেপের কারণে জনমনে প্রশ্ন উঠতেই পারে যে এক ধরণের রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্যই আসলে এ ধরণের সুবিধা দেয়া হচ্ছে কিনা?

এই নির্বাচনী পর্যবেক্ষক বলেন, বর্তমান সরকার যেহেতু তার অধীনেই নির্বাচনটি করতে চায়, তাই এই সরকারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে একটি বার্তা দেয়া যে তারা কোনভাবেই প্রশাসনকে, কোন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে প্রভাবিত করছে না, কোনভাবেই কোন বাড়তি সুবিধা দিচ্ছে না। এটি প্রতিযোগিতার পরিবেশকে 'নষ্ট করে দিবে' বলেও মনে করেন তারা।

তিনি বলেন, “একটি দল যদি এতো রকমের প্রিভিলেজ দিয়ে দেয় তাহলে বাকি দলগুলো কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? তাদের প্রতি আচরণটা তখন এই প্রশাসনের অন্য রকম তো হতে পারে। এটা তো ঠিক হচ্ছে না।”

পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউটের প্রধান আহসান এইচ মনসুর বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে এটা আসলে এক ধরনের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত।
তার মতে, নির্বাচনগুলো এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে হয়। আর এমন পরিস্থিতিতে প্রশাসন ও পুলিশ একটা বড় ভ‚মিকা রাখে। সে কারণেই তাদের ‘খুশি’ রাখতে চায় সরকার।

অর্থনৈতিক অবস্থার সাথে সরকারি এমন সিদ্ধান্ত কিছুটা বিরোধিতামূলক হলেও সরকার আসলে তার নির্বাচনী লাভ-ক্ষতিটাই বড় করে দেখে বলে মনে করেন তিনি।

তিনি বলেন, “প্রমোশন বা এর সাথে পছন্দের লোককে ডিসট্রিক্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে নিয়ে যাওয়া এবং তাদের আশা হলো যে তারা সরকারের স্বার্থটাকে ভালভাবে দেখবে, এটা তো এখন আমাদের কালচারের সাথে মিশে গেছে।”

গত দুটি নির্বাচন নিয়েই বিতর্ক আছে এবং এসব নির্বাচনে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভ‚মিকা নিয়েও সমালোচনা আছে। সে প্রেক্ষিতে এমন পদক্ষেপ নির্বাচনে সমান প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র তৈরির পরিপন্থী বলে মনে করছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।

তিনি বলেন, পদন্নোতির বিষয়গুলো যদি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় হতো, তাহলে সেটি নিয়ে কোন বিতর্কের সুযোগ থাকতো না। কিন্তু যে প্রেক্ষিতে এ ধরণের পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে, তার কারণে এটি পর্যবেক্ষকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads